এবার রওশনকে নিয়ে যা বললেন জিএম কাদের
দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনদিনের ভারত সফর শেষে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় নেমে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বিরোধী দলীয় উপনেতা কাদের বলেন, ‘দলকে হেয় করতে একটি মহল নানা বিভাজন দেখানোর চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভাজন নেই।’
রওশন এরশাদ ‘মায়ের মত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে সকল নেতাকর্মী এক হয়ে কাজ করছে।
মঙ্গলবার হঠাৎ দলটির সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ নিজেকে দলীয় চেয়ারপারসন হিসেবে ঘোষণা করেন। রওশনের নামে যখন ওই ঘোষণা আসে তখন, জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভারত সফরে ছিলেন। ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন রওশন। সাক্ষাতের সময় সংসদ নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়।
গণমাধ্যমে রওশনের সই করা মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমি বেগম রওশন এরশাদ, এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান এই মর্মে ঘোষণা করছি যে পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে ও সিদ্ধান্তক্রমে দলের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।’
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা কো–চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সই করেছেন।
তবে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রওশনের দলীয় প্রধানের পদ নেয়ার খবর ‘ভুয়া খবর’।
ভাবি রওশন এরশাদের সঙ্গে দেবর জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নানা বৈঠকে দু’জন বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। নানা কৌশলে তাদের মানাতেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার ভাই জি এম কাদের ও স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে দলের নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। তখন জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান ও রওশনকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়।
গত বছরের ৩১ অগাস্ট হঠাৎ করে দলের কাউন্সিল আহ্বান করেন রওশন। তবে জিএম কাদেরের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই পদক্ষেপ ‘অবৈধ’, কারণ, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিল আহ্বানের ক্ষমতা রওশনের নেই।
গত ডিসেম্বরে জাপার নেতৃত্ব নিয়ে আদালতেও মামলা করা হয়। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের মধ্যে গত ১৩ ডিসেম্বর দেবর কাদের ও ভাবি রওশন একসঙ্গে গিয়ে দেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাতে সমাঝোতাও হয় দুই পক্ষে।
গত কয়েক মাস ধরেই জি এম কাদের সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। আগামী নির্বাচনে দলের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেনি জাপা।
২০০৬ সালে বিএনপিবিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে জাপা। ২০০৮ সালে জোটবদ্ধ হয়েই ভোট করে তারা।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদ বার বার নিজের অবস্থান বদলাতে থাকেন। ভোটের আগে নাটকীয়ভাবে অসুস্থতার কথা বলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ভোটে যায় জাপা।
বিমানবন্দরে জাপা চেয়ারম্যানের ভারত সফর নিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠ ও সহিংসতা মুক্ত নির্বাচন দেখতে চায়। ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে আলাপ আলোচনা হয়েছে সবকিছু প্রকাশ করা যাবে না। জাতীয় পার্টি কখনোই নির্বাচন বর্জন করে না। তবে আগামী নির্বাচনে অংশ নিবে কি না তা সময়ই বলে দেবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, আমি ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনা কার সঙ্গে হয়েছে বা কী বিষয়ে হয়েছে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলতে পারবো না। কারণ আলাপগুলো ওইভাবেই হয়েছে। উনারা যদি কিছু প্রকাশ করতে চান করবেন, আমার পক্ষ থেকে উনাদের পারমিশন ছাড়া কিছু বলতে পারবো না। তবে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাপা সম্পর্কে ভারতের ভালো ধারণা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার কাছে ভালো লেগেছে যে জাতীয় পার্টি সম্পর্কে উনাদের ধারণা ভালো। পার্টিকে একটা সম্ভাবনাময় দল মনে করেন তারা। উনাদের আস্থা আছে যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল যা সব সময় থাকবে।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, তবে উনারা একটা ভালো নির্বাচন দেখতে চান। এটা সময়মতো যেন হয়। নির্বাচনের আগে পরে কোনো ধরনের সহিংসতা বা সাধারণ মানুষের জীবনধারায় অনিশ্চিত কিছু না হয়। এটা হলে উনারা খুশি হবেন। কারণ বাংলাদেশে ভারতের বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে।
জি এম কাদের আরও বলেন, উনারা আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলে, বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাকলে, সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সরকার যদি গঠিত হয় তাহলে তাদের পক্ষে এসব কাজ করা সহজ হবে। উনারা প্রত্যাশা করেন, যেন সবাই মিলে ওই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেন, যাতে সুন্দর নির্বাচন হয়। নির্বাচনে যেন সহিংসতা, অরাজকতার পরিস্থিতি না হয়।